ঢাকা শহরের রাস্তায় বাইক চালানো মানেই প্রতিদিনের এক ধরনের যুদ্ধ। যেকোনো মুহূর্তে হুট করে একটা বাস রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়তে পারে, হঠাৎ করে রোড ব্লক হয়ে যেতে পারে, আবার মাঝপথেই নেমে আসতে পারে অঝোর বৃষ্টি। এমন অবস্থায় যদি আপনি রাস্তায় নামার আগে কিছু পরিকল্পনা করেন, কিছু নিয়ম মেনে চলেন—তাহলে এই যাত্রাটা আর কঠিন মনে হবে না। বরং আপনি নিজেই হয়ে উঠবেন একজন স্মার্ট বাইকার। এই ব্লগে আলোচনা করব এমন ৭টি স্মার্ট টিপস নিয়ে যা শহরে বাইক চালানো আরও সহজ করবে।
সূচীপত্র
ঢাকা শহরে বাইক চালানোর ৭টি স্মার্ট টিপস
ঢাকা শহর মানেই ব্যস্ততা, ভিড় আর অসহ্য ট্রাফিক। এই শহরের প্রতিদিনের যাত্রা অনেকের জন্য হয়তো একঘেয়ে বা হতাশাজনক, কিন্তু বাইকারদের জন্য এটি যেন প্রতিনিয়ত এক নতুন চ্যালেঞ্জ। একদিকে সময় বাঁচানোর তাড়া, অন্যদিকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা—এই দুইয়ের মাঝে ভারসাম্য রাখাটা অনেকটাই কঠিন। আসুন জেনে নেই ঢাকা শহরে বাইক চালানোর টিপস নিয়ে বিস্তারিত-
১। আগে রুট প্ল্যান করা
ঢাকা শহরের রাস্তাগুলোর কোনো নির্দিষ্ট রুটিন নেই। কখন কোন রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে, কোথায় VIP মুভমেন্ট হবে, কোথায় রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে-এই তথ্যগুলো আগেই না জানলে আপনি অপ্রত্যাশিত জ্যামে পড়ে যেতে পারেন। তাই বাইকে ওঠার আগে মাত্র দুই মিনিট সময় নিয়ে Google Maps বা Pathao App খুলে দেখে নিন কোন রাস্তাগুলোতে ট্রাফিক কম আছে, কোথায় ভিড় বেশি। Google Maps-এর Live Traffic অপশন বা Pathao-এর রাইডার রুট ম্যাপ সিস্টেম এ কাজে দারুণ সাহায্য করতে পারে।
এছাড়া “Avoid Highway” বা “No Tolls” অপশন অন করলে বাইকারদের জন্য নিরাপদ রুট পাওয়া আরও সহজ হয়। ছোট রাস্তা ধরেও আপনি দ্রুত পৌঁছাতে পারেন, যদি আগেই সঠিক প্ল্যানিং থাকে।
২। Rush Hour-এ সতর্ক থাকুন
ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় সকালে অফিস টাইমে (৮টা-১০টা) এবং বিকালে (৫টা-৮টা)। এই সময় রাস্তায় গিজগিজ করে মানুষ, গাড়ি, বাস, রিকশা। অনেক বাইকার হর্ন দিয়ে, গতি বাড়িয়ে বা হঠাৎ লেন পরিবর্তন করে নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। কারণ সামনে থাকা গাড়ি যদি হঠাৎ থামে বা পেছন থেকে কেউ হর্ন দিয়ে উঠে আসে, তখন আপনি হতে পারেন মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার।
এ ধরনের সময় স্মার্ট উপায় হলো-একটু আগে বা পরে রওনা দেওয়া। আপনার অফিস টাইম যদি ৯টা হয়, আপনি ৮:৩০ বা ৯:১৫-এ বের হলে হয়তো ১০–১৫ মিনিট বেশি সময় লাগবে, কিন্তু আপনি জ্যাম এড়াতে পারবেন এবং মানসিক চাপও কম থাকবে।
৩। বাম দিক দিয়ে ওভারটেক করুন
বাইক চালাতে গিয়ে সবচেয়ে বড় ভুলগুলোর একটি হলো—ডান পাশ দিয়ে ওভারটেক করা। ঢাকার রাস্তায় ডান পাশে সাধারণত বাস, ট্রাক, বড় প্রাইভেট গাড়িগুলো চলে। এই গাড়িগুলো আচমকা থেমে যেতে পারে, দিক পরিবর্তন করতে পারে কিংবা অপ্রত্যাশিত গতিতে চলতে পারে। এর ফলে বাইকারদের জন্য এক্সিডেন্টের ঝুঁকি বাড়ে।
অন্যদিকে, বাঁ পাশে সাধারণত রিকশা, সিএনজি বা ছোট যানবাহন চলাচল করে। বাঁ পাশ দিয়ে ওভারটেক করলে আপনি ধীরগতির যানবাহনের পাশ দিয়ে ধীরে এগিয়ে যেতে পারবেন, রাস্তায় জায়গা বেশি থাকে এবং রিএ্যাক্ট করার জন্য সময়ও বেশি পাওয়া যায়। নিজেকে সেফ রাখতে চাইলে ওভারটেকের সময় এই নিয়মটা অবশ্যই মেনে চলুন।
৪। হেলমেট ও প্রোটেকশন গিয়ার সবসময় ব্যবহার করুন
“একটু দূরের পথ”, “দ্রুত যেতে হবে”-এই অজুহাতে অনেকেই হেলমেট পরা এড়িয়ে যান। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, মোটরবাইকের দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত হলে প্রাণহানির আশঙ্কা প্রায় ৭০% বেড়ে যায়। আর ভালো মানের হেলমেট পরলে এই ঝুঁকি কমে আসে ৪০%-এর বেশি। শুধু হেলমেট নয়, আপনার কাছে থাকা উচিত গ্লাভস, এলবো গার্ড, রিফ্লেক্টিভ জ্যাকেট এবং কনফর্টেবল জুতা।
“একটু দূরের পথ”, “দ্রুত যেতে হবে”-এই অজুহাতে অনেকেই হেলমেট পরা এড়িয়ে যান। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, মোটরবাইকের দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত হলে প্রাণহানির আশঙ্কা প্রায় ৭০% বেড়ে যায়। আর ভালো মানের হেলমেট পরলে এই ঝুঁকি কমে আসে ৪০%-এর বেশি। শুধু হেলমেট নয়, আপনার কাছে থাকা উচিত গ্লাভস, এলবো গার্ড, রিফ্লেক্টিভ জ্যাকেট এবং কনফর্টেবল জুতা।
৫। বাইক মেইনটেনেন্স করুন
ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিনের ধুলাবালি, খোড়াখুঁড়ি, কাদা এবং পানি বাইকের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আপনি যদি নিয়মিত চেইন পরিষ্কার না করেন, ব্রেক প্যাড পরীক্ষা না করেন বা ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন না করেন—তাহলে হঠাৎ করেই বাইক বন্ধ হয়ে যেতে পারে মাঝ রাস্তায়।
প্রতি মাসে একবার করে নিচের কাজগুলো চেক করা ভালো:
- Engine Oil এর রঙ ও লেভেল
- ব্রেক প্যাডের অবস্থা
- চাকা ও স্পোক
- ব্যাটারি কানেকশন
- চেইন পরিষ্কার ও লুব্রিকেশন
৬। ফোনে নয়, চোখ রাখুন রাস্তায়
বাইকে বসে ফোনে কথা বলা, ম্যাসেঞ্জারে রিপ্লাই দেওয়া কিংবা গান শোনার মতো অদূরদর্শী কাজ অনেক রাইডারই করেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে—রাস্তায় প্রতিটি মুহূর্তে পরিবর্তন ঘটে, আর আপনি যদি ফোকাস না রাখেন তাহলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আপনি চাইলে মোবাইল হোল্ডার ব্যবহার করে GPS চালু রাখতে পারেন, কিন্তু পুরো মনোযোগ রাখতে হবে সামনে। বিশেষ করে মোড়, সিগনাল, ফুটওভার ব্রিজের নিচে বা স্কুল-কলেজ সংলগ্ন এলাকাগুলোতে আরও বেশি সতর্ক থাকা জরুরি।
৭। বাইকে হঠাৎ ব্রেক করবেন না
ঢাকার রাস্তায় চলাফেরা করতে গিয়ে আপনি প্রায়ই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন যেখানে আচমকা থামতে হতে পারে—সামনে রিকশা থেমে গেল, পাশের গাড়ি বাঁক নিলো বা কেউ হুট করে রাস্তা পার হচ্ছে। এমন সময় হঠাৎ করে পুরো ক্লাচ চাপা বা ফ্রন্ট ব্রেক টেনে ধরার ফলে বাইকের ব্যালেন্স নষ্ট হয় এবং স্কিড করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
স্মার্ট বাইকাররা সবসময় কম্বিনেশন ব্রেকিং ফলো করেন। অর্থাৎ, সামনের এবং পেছনের ব্রেক একসাথে ধীরে চাপেন যাতে বাইক ব্যালেন্সডভাবে থামে এবং ঝাঁকুনি কম হয়। এছাড়া আপনার বাইকে যদি ABS (Anti-lock Braking System) থাকে, তাহলে হঠাৎ ব্রেক করার সময় চাকা লক হয় না, ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে।
অতিরিক্ত কিছু উপকারী টিপস
- সবসময় সঙ্গে রাখুন একটি রেইনকোট ও বাইক কভার।
- বাইকের নথিপত্র, লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন কপি সঙ্গে রাখুন
- রাতে চালালে হেডলাইট ও টেইল লাইট যেন সঠিকভাবে কাজ করে নিশ্চিত করুন
- চাইলে Green Delta বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাইক ইনস্যুরেন্স করাতে পারেন
শেষকথা
ঢাকা শহরে বাইক চালানো মানেই জ্যামের বিরুদ্ধে প্রতিদিনের যুদ্ধ। কিন্তু আপনি যদি এই ৭টি স্মার্ট টিপস মনে রাখেন, তাহলে প্রতিদিনের রাইড হবে আরও নিরাপদ, আরামদায়ক এবং সময় সাশ্রয়ী। শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যদের সুরক্ষার কথাও মাথায় রেখে রাইড করুন। বাইক সম্পর্কে আরও টিপস জানতে এখানে ভিজিট করুন
শখের মোটরসাইকেলের সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করতে পারেন বাইকগার্ড জিপিএস ট্র্যাকার। ফিচার হিসাবে পাচ্ছেন ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, লাইভ ট্র্যাকিং, জিও-ফেন্সিং, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন বাইকগার্ড প্যাকেজ সমূহ অথবা চাইলে আমাদের এক্সপার্ট টিমের সহযোগিতা পেতে নিচের ফরমটি জমা দিতে পারেন।